ঢাকা , শুক্রবার, ২০২৫ জুলাই ০৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

বিশেষ প্রতিবেদন

‘অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথে’ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর 

মাহফুজ আনোয়ার সৌরভ-
প্রকাশিত : রবিবার, ২০২১ নভেম্বর ২১, ০৬:১১ অপরাহ্ন
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর 

মাদক বর্তমান সময়ে একটি গুরুতর সমস্যা। একটি সুন্দর জীবনকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয় এই মাদক। অকালেই ধুলোয় মিশে যায় বহু নবীন প্রাণ। এখন পর্যন্ত বহু পরিবার ধংস হয়ে গেছে এই মাদকের করাল গ্রাসে। মাদক সেবনের ফলে মানুষের মধ্যে বিকৃত-মস্তিস্কের মতো আচরণ পরিলক্ষিত হয়। আর একজন বিকৃত-মস্তিস্কের মানুষ দ্বারা কখনোই দেশ ও জাতির উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। তাই আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রণয়ন করেন।

মাদকের সঙ্গে জড়িত  কাউকে চুল পরিমান ছাড় দেয়া হবে না এ কথা পরিস্কারভাবে বলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পুলিশ, রেব ও বিজিবির সাথে সাথে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরও মাদক নির্মূলে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। কুমিল্লা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক চৌধুরি ইমরুল হাসান জানান তিনি যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি একটু ভিন্নভাবে কাজ করার চেষ্টা করছেন। মামলার সংখ্যকে প্রধান্য না দিয়ে মূল হোতাদের গ্রেফতার এর মাধ্যমে মাদককে গোড়া থেকে নির্মূল করতে চান তিনি। তার এক অভিযান এর বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন আজকাল অপরাধীরাও ডিজিটালাইজেশনের সুযোগ নিচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে পালিয়ে যাবার সময় তিনি গ্রেফতার করেন এক মহিলা মাদক ব্যবসায়ীকে। পরে তার বাসা থেকে মাদকসহ তার সিসি ক্যামেরা জব্দ করেন তারা।  

কুমিল্লা জেলা সিমান্তের সংলগ্ন হওয়ার কারণে এই জেলাতে মাদক সহজলভ্য বলে জানান তিনি। তিনি বুড়িচং, বি-পাড়া,  চৌদ্দগ্রাম উপজেলাকে এবং কুমিল্লা শহরের অন্তর্গত ধর্মপুর, চর্থা, শাসনগাছা এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি। গত ১৬ই নভেম্বরও ব্রাহ্মণপাড়া থেকে ১০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেন তার টিম। উল্লেখ্য যে ২০২১ সালে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১৪৯৮৭ পিছ ইয়াবা, ১৬৮.১৮৫ কেজি গাঁজা, ২১৪৫ বোতল ফেনসিডিল, ১১১ ক্যান বিয়ার, ৯২ বোতল বিদেশী মদ ও চোলাইমন ৩৮ লিটার জব্দ করেন কুমিল্লা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ বছরের জুন মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১৩১ জন পুরুষ ও ৩৬ জন মহিলাকে আটক করেছেন এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ১১৩ জনকে কারাদন্ড ও ৯২৫২০ টাকা জরিমানা করেন। মাদকের চাহিদা কমানো, মাদকের সরবরাহ কমানো এবং পুনর্বাসনের মাধ্যমে তিনি মাদক ধ্বংস করার কাজ করছেন বলে জানান।

প্রতিটি বিদ্যালয়ে পাঁচ সদস্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদক বিরোধী কমিটি গঠন করা হয়ে থাকে। যে কমিটিতে সভাপতি হিসেবে থাকেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ ক্রিড়া শিক্ষক,শিক্ষক প্রতিনিধি , ছাত্র প্রতিনিধি এবং অভিভাবক প্রতিনিধি। ছাত্রদের পর্যবেক্ষণ করে তাদের কেউ মাদকে আসক্ত হচ্ছে কিনা তা জানার জন্য প্রত্যেক মাসে এই কমিটি কর্তৃক মিটিং এর আয়োজন করা হয়। উপজেলা ভিত্তিক ১০ সদস্যের কমিটি তৈরি করবেন বলে আশাবাদী তিনি। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ গন্যমান্য ব্যক্তিদের কে নিয়ে এ কমিটি তৈরি করা হবে। এতে করে তৃণমূল পর্যায়েও মাদক বিরোদ্ধে সামাজিক আন্দোলন ও মাদকের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করার সুযোগ পাবেন বলে বিশ্বাস করেন।

গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য তিনিই প্রথম প্রত্যেকটি সরকারি দপ্তর সহ সকল হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট এ মাদকের ক্ষতি সমূহ উল্লেখ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার মোবাইল নাম্বার সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও লিফলেট বিতরণের ব্যবস্থা করেন। স্কুলে বাচ্চাদের মধ্যে মাদকের ক্ষতি সমূহ উল্লেখিত স্কেল ও জ্যামিতি বক্স প্রদান করে তাদেরকে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতন করার কাজ করছেন। 

মাদকাসক্ত পূনর্বাসনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন বাংলাদেশে মাত্র ৪টি সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। কুমিল্লাতে সরকার অনুমোদিত ১১ টি বেসরকারি নিরাময়কেন্দ্র  থাকলেও কোন সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নেই। সরকারিভাবে কুমিল্লাতে একটি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করলে তাদের কাজ করতে আরও সুবিধা হবে বলেন তিনি। জীবনকে ভালবাসুন, মাদককে না বলুন। এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে সকলে মিলে মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করলে সমাজ থেকে মাদকের কালো ছায়া সরে যাবে ইনশাআল্লাহ।


মন্তব্য করুন

আরও খবর