ঢাকা , শুক্রবার, ২০২৫ জুলাই ০৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

বিশেষ প্রতিবেদন

বন অধিদপ্তর প্রত্যাশানুযায়ী বাস্তবায়ন অপ্রতুলতা


প্রকাশিত : রবিবার, ২০২১ নভেম্বর ২১, ০২:১২ অপরাহ্ন
কুমিল্লা বন অধিদপ্তর

গাছকাটা ও আরো নানাবিধ সমস্যা বিদ্যমান বন বিভাগে।  এমতাবস্থায় কুমিল্লাসহ বন অধিদপ্তর এ ৩০ সেপ্টেম্বর প্রধান কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন মোহাম্মদ আলী। বিদ্যমান নানাবিধ সমস্যা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে কোটবাড়ীর রেন্জ কমকর্তা বলয় চন্দ্র সাহা জানান, যোগদানের পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বন নিয়ে সমস্যা থাকায় ওইখানের সিসিএফ ও সচিব বসে এই সমস্যায় সমাধান করেন। তিনি বলেন, চিটাগাং এ সব রিজার্ব ফরেস্ট আছে কিন্তু কুমিল্লায় তো নাই তাই তেমন কোন সমস্যা উনি পান নি। বিদ্যমান অন্যান্য সমস্যা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তা বাড়াতে বা নতুন ভাবে রাস্তা করতে গিয়ে অনেক গাছ কাটা হচ্ছে। তবে তিনি এটাও বলেন যে এটা জনগনের সুবিধাত্তে করা হয় বলে তেমন কোন জটিল সমস্যা হয় নাই-এটা তাঁর ভাষ্যমত। 
গাছের মধ্যে দুই/তিন প্রকার আছে। একটি স্বল্প মেয়াদী, আরেকটি দীর্ঘ মেয়াদী। আবার ইন্ডাষ্টিয়াল ও আছে কিছু গাছ।এ বন বিভাগে সব স্বল্প মেয়াদী গাছ আছে। আমাদের এখানে কোন দীর্ঘ মেয়াদী গাছ নেই।আর দীর্ঘ মেয়াদী যে সব গাছ আছে ওইগুলো কাটা নিষেধ। তিনি বলেন এখানে গ্যাস এর ব্যবহার বেশি থাকায় গাছ কাটার প্রবণতা কম। 


তবে নিয়ম না মেনে গাছ কাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, হয়তো বাড়ির গাছ গুলোই কাটা হয় এভাবে।  যোগদানের পর পরে এখন পযর্ন্ত তেমন কোন অভিযোগ পাননি  কিন্তু সাথে এটাও জানান ছোট খাট বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিয়ে সমাধান লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।  রাস্তার পাশে অল্প অল্প বাগান করান চিন্তাও ইতিমধ্যে উনি নিয়েছেন। জাতীয় উদ্যান লালমাই এর পরিধি বাড়ানোর চিন্তাও তিনি করছেন। কিন্তু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার সেটি। ঢাকা থেকে টিম আসলে সকল কিছু পর্যবেক্ষন করে তিনি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ নিবেন বলে জানিয়েছেন। বোটানিক্যাল গার্ডেন কে আরো সংরক্ষিত করার চেষ্টায় কাজ করে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। 

আগের গেজেটে বন বিভাগের জমি গুলো বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো ছিটাঁনো। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একটি জায়গা নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছিলো পরে কাগজ পত্র দেখে তারা বন বিভাগের জায়গা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। 


কুমিল্লাতে কোন বন নেই আছে সব সামাজিক বনায়ন।আর সামাজিক বনায়ন নিয়েই কাজ করতে চাচ্ছেন। প্রতি SFNTC তে কয়েকটা আছে ৮ কি.মি বাগান করার চেষ্টা। কুমিল্লা ডিভিশনে দুইটি রেন্জ অফিস ও সাতটি এসএফএনটিসি আছে। জেলা সমন্বয় কমিটির মধ্যে নার্সারীর তথ্য দেওয়া আছে। বেশি দামে কাঠ বিক্রির কোন সুযোগ নেই। কারণ এই কাঠ গুলো একটি টেন্ডারের মাধ্যেমে দেওয়া হয় আর নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও কমিটি তদন্ত করে দেখছে  এ ব্যাপারটি । উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তদন্ত করার পরেই টেন্ডার দেওয়া হয়। গাছ কাটার বয়স নূন্যতম কত হওয়া উচিত জানতে চাইলে এ প্রশ্নের জবাবে বলয়,চন্দ্র সাহা জানান, একটি গাছ দশ বছর হলেই কাটা যাবে বলে বলেন।

তবে গাছ কাটার নূন্যতম কতো বয়সের উত্তর সরেজমিনে খুঁজতে গিয়ে ওইখানেই অবস্থিত ভারপাপ্ত রেন্জ কর্মকর্তা সাইফুল বলে, সকল কিছুই নির্ধারণ করেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকতা। এখন নির্বাহী কর্মকর্তা যদি বলেন একটি গাছ চার বছর বা আট বছর বা পনেরো বছরে কাটবেন তো কাটতে পারবেন। এখন বাংলাদেশের সকল রাস্তাঘাট উন্নয়ন হচ্ছে। এখন এই উন্নয়ন করতে গিয়ে অনেক গাছ কাটতে হচ্ছে। এখন মানুষ রাস্তা পাশের বাড়িঘর করতে চলে আসছে। আর তখনেই অনেক গাছ কেটে ফেলছে। এইটি গাছ কাটার সাথে সাথেই সেই স্থানটি দখল হয়ে যায়। পরবর্তীতে তাই  আর ওইখানে কোন সামাজিক বনায়ন করা সম্ভবপর হয় না বন বিভাগের জন্য। 


আর পাশাপাশি জনগন কেও সামাজিক বনায়নের গুরুত্ব অনুধাবন করাতে তাদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেছেন। কারণ যে হারে রাস্তায় দুই পাশেই বাড়িঘর হচ্ছে কিছুদিন পর বাগানের কোন চিহ্নই থাকবে না। এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ বা ধারা সম্পর্কে জানথে চাইলে বলেন যে, ধারা বা পদক্ষেপ তো নিলেই হবে না। কারণ সামাজিক বন আমাদের নিয়ন্ত্রনে না। আমাদের রাজেশপুর, যশপুর, কোটবাড়ি ইত্যাদি আমার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু বাগান রক্ষার ব্যাপারে বাঁধা হচ্ছে সামাজিক সার্বিক সহযোগিতার অভাব। সমাজের অনেক শ্রেনীর মানুষ যারা গাছ কাটে তা জেনেও অপরাধীকে ধরিয়ে দেয় না। তাই আমরা সামাজিক বন রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছি। আর এই সামাজিক বন সমাজের মানুষের সহযোগিতা না থাকলে করা সম্ভব না। সমাজ যতোক্ষন পযর্ন্ত না সচেতন হবে ততোক্ষন পযর্ন্ত বৈশ্বিক সমস্যা সমাধান হবে না। গাছ কাটা, বাগান করা, সামাজিক বন ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হাতে থাকে। পাশাপাশি উপরমহলের নানাবিধ প্রেশার থাকার দরুণ অনেক পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হচ্ছেন না তারা। 

বলয় চন্দ্র সাহা আরও বলেন যে, তিন চার মাস আগে লালমাই বড় ধর্মপুর ৪০ টি আকাশমণি গাছ কাটা হয়েছে। আমরা খবর পাওয়া মাত্রই লোকজন নিয়ে গাছ আমাদের কাছে নিয়ে এসেছি। 
তিনি আরো বলেন, যে একটি আকাশমনি গাছের দুই থেকে তিন ফুটের বেড় হলে সেটার ফুট মূল্য ৪০০ টাকা ধরা হয়। মেহগনি গাছের তিন ফুট বেড়ের ফুট মূল্য ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এক এক গাছের বেড় অনুযারী ফুট মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এই মূল্যের সাথে ভ্যাট যুক্ত করা হয়। 


তবে তিনি এটাও জানান, বড় কোন সমস্যার সম্মুখীন তারা হননি। এখন একটি গাছের ডাল কাটা হলে খবর পাওয়া মাত্রই ওইখানে উপস্থিত হন। এইবছর কুমিল্লা বিভাগে আড়াই লক্ষ চারা বিত্রুয় ও বিতরনের জন্য আছে। গত ২০২০-২১ অর্থ বছরেও আমরা ২ লক্ষ ৫০ হাজার চারা বিত্রুয় ও বিতরন করেছি। এই অর্থ বছরের চারা গুলো এপ্রিল মে মাসে বিত্রুয় ও বিতরন করা হবে। উপজেলা থেকে আসে রেন্জে, রেন্জ থেকে আসে বিভাগে, বিভাগ ঢাকা পাঠালে তারপর আমরা এই চারার পরিমাণ নিধারণ করা হয়। কথায় এক পযার্য়ে উনার কাছ থেকে গত ২০২০-২১ অর্থ বছরের ও ২০২১-২২ চলমান অর্থবছরের জরিমানার হিসাব জানতে চাইলে উনি বলেন একাউন্টস এর কাছে আছে। উনি এই সেকশনের না বলে এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেলেন। তবে জরিমানা করলে সেই জরিমানা আদায় করা হয়। আর যদি জরিমানা না দেয় তো জেল হয়।


মন্তব্য করুন

আরও খবর